নতুন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সেরা মার্কেটপ্লেস কোনটি?

নতুন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সেরা মার্কেটপ্লেস কোনটি বিষয়টি নিয়ে আজকে গভীরভাবে আর্টিকেলটিতে আলোচনা করব। বর্তমানে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ফ্রিল্যান্সার তৈরি হচ্ছে, কিন্তু তারা সঠিক প্ল্যাটফর্ম বাছাই না করার কারণে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টর থেকে ইনকাম করতে পারে না।

যার ফলে তারা ফ্রিল্যান্সিং থেকে অনেকটা দূরে সরে যায়। আপনারা যারা নতুন ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন, তাদের জন্য কোন ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মটি সেরা হবে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। 

ভূমিকা

বর্তমানে অনলাইনে ঘরে বসে আয় করার সবচেয়ে জনপ্রিয় ও কার্যকরী মাধ্যম হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। তবে যারা একেবারে নতুন, তাদের সবচেয়ে বড় প্রশ্নঃ নতুন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সেরা মার্কেটপ্লেস কোনটি? সঠিক মার্কেটপ্লেস বাছাই না করতে পারলে শুরুতেই হতাশ হতে হয়।

আরো পড়ুনঃ ডিজিটাল মার্কেটিং A to Z গাইড

আরো পড়ুনঃ কিভাবে ফেসবুকে প্রতিদিন 500 আয় করা যায়?

তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানবো কোন মার্কেটপ্লেসগুলো নতুনদের জন্য সবচেয়ে উপযোগী এবং কেন। বিস্তারিত জানতে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।

কেন সঠিক মার্কেটপ্লেস গুরুত্বপূর্ণ?

একটি ভালো মার্কেটপ্লেস আপনাকে কাজের সুযোগ এনে দেয়, পেমেন্ট সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেয় এবং আপনার দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে। নতুনদের জন্য, এমন একটি প্ল্যাটফর্ম বেছে নেওয়া উচিত যেখানে প্রতিযোগিতা তুলনামূলকভাবে কম এবং কাজের সুযোগ বেশি। তাই সকলের উচিত সঠিক ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মটি বেছে নেওয়া।

নতুন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সেরা মার্কেটপ্লেস কোনটি?

বর্তমানে নতুন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য এমন কিছু প্ল্যাটফর্ম রয়েছে যেখানে কাজের সুযোগ, সুরক্ষা এবং শেখার পরিবেশ তুলনামূলকভাবে ভালো। এই আর্টিকেলে আমরা নতুন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সেরা কিছু মার্কেটপ্লেস নিয়ে আলোচনা করব, যা আপনাকে আপনার ফ্রিল্যান্সিং যাত্রা শুরু করতে সাহায্য করবে।নতুন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সেরা মার্কেটপ্লেসগুলোঃ

১. Fiverr (ফাইভার)

ফাইভার নতুন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি প্ল্যাটফর্ম। এখানে আপনি “গিগ” (Gig) তৈরি করে আপনার পরিষেবাগুলো অফার করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনার যদি লোগো ডিজাইন করা দক্ষতা থাকে,

আরো পড়ুনঃ  বাবুল গেম খেলে টাকা ইনকাম ৬টি জনপ্রিয় অ্যাপস

তাহলে “আমি $৫ ডলারে একটি প্রফেশনাল লোগো ডিজাইন করব” এমন একটি গিগ তৈরি করতে পারেন। এখন আপনার গিগ কোন ক্লায়েন্ট যদি পছন্দ করে থাকে, তাহলে আপনি সেই ক্লায়েন্ট এর কাছ থেকে লোগো ডিজাইন কাজটি পেতে পারেন।

নতুনদের জন্য ফাইভারে কাজের সুযোগ অনেক বেশি, কারণ এখানে ছোট ছোট কাজ (micro-tasks) থেকে শুরু করে বড় প্রজেক্টও পাওয়া যায়।  

কেন Fiverr নতুনদের জন্য ভালো?

  • প্রোফাইল এবং গিগ বানিয়ে বসে থাকলেও ক্লায়েন্ট আসতে পারে
  • কম্পিটিশন তুলনামূলক কম
  • ডিজাইন, কন্টেন্ট রাইটিং, ভিডিও এডিটিং, এসইও সহ সব ধরনের কাজের সুযোগ

সুবিধাঃ

  • এই মার্কেটপ্লেসে ফ্রিল্যান্সিং কাজ শুরু করা সহজ
  • কম মূল্যে কাজ শুরু করার সুযোগ রয়েছে।
  • বিভিন্ন ধরনের কাজের জন্য গিগ তৈরি করা যায়।
  • আর এখানে নিরাপদ ভাবে পেমেন্ট গ্রহন করা যায়, অর্থাৎ পেমেন্ট নিরাপত্তা রয়েছে।

অসুবিধাঃ 

  • প্রথম দিকে প্রতিযোগিতা বেশি হতে পারে।
  • কমিশন হার তুলনামূলকভাবে বেশি (২০%)।

২. Upwork (আপওয়ার্ক)

আপওয়ার্ক একটি বৃহত্তর এবং আরও প্রফেশনাল ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম। এখানে বিভিন্ন ধরনের প্রজেক্ট এবং দীর্ঘমেয়াদী কাজের সুযোগ পাওয়া যায়। আপওয়ার্কে কাজ পাওয়ার জন্য বিড করতে হয় এবং ক্লায়েন্টের কাছে আপনার পোর্টফোলিও উপস্থাপন করতে হয়।

নতুনদের জন্য আপওয়ার্কে কাজ পাওয়া কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হলেও, একবার কাজ পাওয়া শুরু করলে এটি আপনার আয়ের একটি স্থিতিশীল উৎস হতে পারে।

সুবিধাঃ

  • বড় এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রজেক্টের কাজ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
  • ঘণ্টাপ্রতি ও ফিক্সড প্রাইস প্রজেক্ট পেতে পারেন
  • দীর্ঘমেয়াদি ক্লায়েন্টের সম্ভাবনা রয়েছে। 
  • বিভিন্ন দক্ষতার জন্য কাজ পাওয়া যায়।
  • পেমেন্ট সুরক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত শক্তিশালী।

অসুবিধাঃ 

  • এখানে প্লাটফর্মটিতে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি।
  • প্রোফাইল তৈরি করা এবং প্রথম কাজ পাওয়া কঠিন হতে পারে।

৩. Freelancer.com (ফ্রিল্যান্সার.কম)

ফ্রিল্যান্সার.কম আপওয়ার্কের মতোই একটি বিডিং-ভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম। এখানেও ক্লায়েন্টরা প্রজেক্ট পোস্ট করে এবং ফ্রিল্যান্সাররা সেই প্রজেক্টের জন্য বিড করে। এই প্ল্যাটফর্মেও বিভিন্ন ধরনের কাজ পাওয়া যায় এবং নতুনদের জন্য এটি একটি ভালো প্ল্যাটফর্ম হতে পারে যদি তারা ধৈর্য ধরে বিড করতে পারে।

আরো পড়ুনঃ  কোন app দিয়ে টাকা ইনকাম করা যায়?

কেন বেছে নেবেনঃ

  • বিভিন্ন স্কিলের কাজের সুযোগ। 
  • এছাড়াও প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে
  • এই মার্কেটপ্লেসের সহজ ইন্টারফেস রয়েছে। 
  • বিডিং প্র্যাকটিস করার ভালো একটি প্লাটফর্ম।

৪. PeoplePerHour (পিপলপারআওয়ার)

পিপলপারআওয়ার ফাইভার এবং আপওয়ার্কের মিশ্রণ বলা যেতে পারে। এখানে আপনি “Hourlies” (ফাইভারের গিগ-এর মতো) তৈরি করে পরিষেবা অফার করতে পারেন, আবার প্রজেক্টের জন্য বিডও করতে পারবেন।

এই প্ল্যাটফর্মে তুলনামূলকভাবে প্রতিযোগিতা কম এবং নতুনদের জন্য কাজ পাওয়ার সুযোগ বেশি হতে পারে। এছাড়াও এই মার্কেটপ্লেসে ইউরোপিয়ান ক্লায়েন্টদের কাছে থেকে কাজ পাওয়ার সুযোগ পেতে পারেন। এতে করে অনেক বেশি ডলার ইনকাম করা সম্ভব। 

বিশেষ দিকঃ

  • তুলনামূলকভাবে প্রতিযোগিতা কম
  • ভালো মানের ক্লায়েন্ট পাওয়া যায়।
  • ইউরো বা পাউন্ডে পেমেন্ট পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
  • আর এখানে SEO, কপি রাইটিং, ওয়েব ডিজাইন ইত্যাদি কাজের চাহিদা বেশি। 

৫. Toptal (টপট্যাল)

যদি আপনার স্কিল অনেক উন্নত হয়, তবে Toptal হতে পারে আপনার জন্য আদর্শ একটি মার্কেটপ্লেস। টপট্যাল মূলত উচ্চ-দক্ষতাসম্পন্ন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য, বিশেষ করে ডেভেলপার, ডিজাইনার রয়েছেন।

যদি আপনার নির্দিষ্ট কোনো ফ্রিল্যান্সিং ক্ষেত্রে অসাধারণ দক্ষতা থাকে, তাহলে টপট্যাল আপনার জন্য একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্ম হতে পারে। তবে এখানে কাজ পাওয়ার জন্য কঠোর স্ক্রিনিং প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

টপটাল কেন সেরাঃ

  • উচ্চ বেতনের কাজ পাওয়া সম্ভব। 
  • বিশেষজ্ঞদের জন্য উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম।
  • উচ্চ মানের ক্লায়েন্ট পাওয়া যায়
  • স্কিলভিত্তিক টপ মার্কেট

নতুন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস

  • প্রোফাইল তৈরি করুনঃ ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম গুলোতে একাউন্ট খুলে সেখানে আপনার দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং পোর্টফোলিও সঠিকভাবে উপস্থাপন করুন। 
  • পোর্টফোলিও যোগ করুনঃ আগের কাজ না থাকলেও কিছু স্যাম্পল বানিয়ে রাখুন। 
  • পরিষেবা অফার করুনঃ আপনি কোন ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো কাজ করতে পারেন তা নির্ধারণ করুন এবং সেই অনুযায়ী পরিষেবা অফার করুন।
  • প্রথম কাজগুলো কম মূল্যে করুনঃ প্রথমদিকে মার্কেটপ্লেসে কোন কাজ পেলে ক্লায়েন্ট এর কাছ থেকে কম চার্জ গ্রহণ করুন। মূলত রেটিং এবং রিভিউ পাওয়ার জন্য প্রথম দিকে কম মূল্যে কাজ করতে থাকুন। 
  • যোগাযোগ করুনঃ ক্লায়েন্টের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করবেন এবং ক্লায়েন্টের রিপ্লাই দ্রুত দেওয়ার চেষ্টা করবেন, এতে করে বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে। 
  • নিয়মিত আবেদন করুনঃ প্রথম দিকে ২০-৩০টা বিড করে হলেও একটি কাজ পাওয়ার চেষ্টা করুন।
  • ধৈর্য ধরুনঃ ফ্রিল্যান্সিংয়ে সাফল্য রাতারাতি আসে না। আমরা সবাই জানি ধৈর্য এবং অধ্যবসায় সাফল্যের চাবিকাঠি। 
  • দক্ষতা বৃদ্ধি করুনঃ নতুন কোন দক্ষতা বা স্কিল শিখুন এবং নিজেকে সবসময়ই আপডেটেড রাখুন।
আরো পড়ুনঃ  বাস গেম খেলে টাকা ইনকাম কি সম্ভব?

নতুনদের জন্য কোন মার্কেটপ্লেস সবচেয়ে উপযুক্ত?

যদি আপনি একদম নতুন ফ্রিল্যান্সার হন, তাহলে Fiverr হতে পারে আপনার জন্য সবচেয়ে সেরা প্ল্যাটফর্ম। কারণ এখানে বিড করার ঝামেলা নেই, আর সহজেই ছোট ছোট ফ্রিল্যান্সিং কাজগুলো পাওয়া যায়। যেখান থেকে প্রতিদিন পাঁচ থেকে দশ ডলার আয় করা সম্ভব। যদি ইংরেজি ও প্রফেশনালিজম ভালো হয়, তাহলে Upwork-এও চেষ্টা করতে পারেন।

শেষ কথা

নতুন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সেরা মার্কেটপ্লেস কোনটি? বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করেছি। আলোচনা থেকে বুঝতে পারছেন ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে কঠোর পরিশ্রম এবং ধৈর্য ধরে কাজ করতে হয়। আপনি যেই প্লাটফর্মে কাজ করুন কি না আপনাকে অবশ্যই ধৈর্য ধরে কাজ করে যেতে হবে।

তবে যারা নতুন ফ্রিল্যান্সার আছেন তাদের জন্য কিছু প্ল্যাটফর্ম উপযুক্ত হতে পারে, যা আর্টিকেলটিতে শেয়ার করেছি। নতুন ফ্রিল্যান্সাররা প্রথম দিকে ছোট ছোট কাজ করে ইনকাম করবেন। আর বেশি বেশি কাজ করে নিজের প্রোফাইলের রেটিং ও রিভিউ বাড়াবেন।

কারণ ক্লায়েন্ট সাধারণত উচ্চ রেটিং সম্পন্ন ফ্রিল্যান্সারদের বেশি কাজ দিয়ে থাকে। তাই সকলে বলবো নতুন ফ্রিল্যান্সার হিসাবে প্রথমে ফাইবারে কাজ শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে আপনার প্রোফাইলের রেটিং বাড়াতে থাকুন। 

Leave a Comment