বর্তমান সময়ে অনলাইন ইনকামের অনেক উপায় রয়েছে। এর মধ্যে পোস্ট করে টাকা আয় সবচেয়ে সহজ উপায়। আর এই উপায়ে যেকোনো ব্যক্তি ঘরে বসেই অনলাইন থেকে ইনকাম করতে পারবে। তাই এই উপায়টি নিয়ে আমরা আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করব। কিভাবে আপনি বিভিন্ন প্লাটফর্মে পোস্ট করে ইনকাম করতে পারেন তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো।
ভূমিকা
বর্তমান ডিজিটাল যুগে অনলাইনে আয়ের অনেক উপায় তৈরি হয়েছে, যার মধ্যে “পোস্ট করে টাকা আয়” একটি জনপ্রিয় এবং সহজ পদ্ধতি। শুধু ফেসবুক, ব্লগ, ইউটিউব কিংবা ফোরামে পোস্ট করেই আপনি প্রতিদিন ঘরে বসে আয় করতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ ফেসবুকে প্রতিদিন ৫০০ টাকা আয় করার উপায়
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশে অ্যাপ দিয়ে প্রতিদিন ১০০০ টাকা আয় করার উপায়
এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত জানব কীভাবে পোস্ট করে ইনকাম করা যায়, কোথায় পোস্ট করলে টাকা পাওয়া যায় এবং কীভাবে আপনি শুরু করবেন।
পোস্ট করে টাকা আয় কি?
পোস্ট করে টাকা ইনকাম মানে হচ্ছে কোনো একটি নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মে কনটেন্ট (লেখা, ছবি, ভিডিও বা লিংক) শেয়ার করা এবং সেই পোস্ট থেকে টাকা উপার্জন করা। এটি হতে পারে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, স্পনসর্ড পোস্ট, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং অথবা নিজের কনটেন্ট মোনেটাইজেশন করার মাধ্যমে।
পোস্ট করে টাকা আয় করার কার্যকর উপায়
বর্তমানে বিভিন্ন প্লাটফর্মে পোস্ট করার মাধ্যমে আপনি ভালো পরিমাণ আর্নিং করতে পারবেন। বিশেষ করে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মেই পোস্ট করার মাধ্যমে ইনকাম করা যায়। সেখানে আপনি স্পন্সর পোস্ট, প্রমোশনাল পোস্ট সহ অন্যান্য অনেক ধরনের পোস্ট লেখার মাধ্যমে আয় করতে পারবেন। এবার চলুন পোস্ট করে টাকা আয় করার কার্যকরী উপায় গুলো জেনে আসি।
১. ফেসবুক গ্রুপে প্রোমোশনাল পোস্ট করা
আপনার কাছে যদি কোনো পণ্য, অ্যাফিলিয়েট লিংক বা রেফার কোড থাকে, তাহলে ফেসবুক গ্রুপে টার্গেটেডভাবে পোস্ট করে আয় করতে পারবেন। সঠিক গ্রুপ বাছাই করে সেখানে আকর্ষণীয় পোস্ট দিলে বিক্রি বা সাইনআপের মাধ্যমে ইনকাম করা যেতে পারে।
তবে এই ক্ষেত্রে অবশ্যই পোস্টগুলো আকর্ষণীয় এবং এক্সক্লুসিভ হতে হবে। কারণ আকর্ষণীয় পোস্টগুলো দর্শকরা পছন্দ করে থাকে, যদি দর্শকদের আপনার পোস্ট ভালো লাগে তাহলে আপনার লিংক থেকে হয়তো প্রোডাক্ট কিনতে পারে।
এর ফলে আপনি প্রোডাক্ট বিক্রি করার মাধ্যমে ইনকাম করতে পারবেন অথবা প্রোডাক্টের থেকে কমিশন নিয়েও আয় করতে পারেন। বর্তমান সময়ে ফেসবুকে অনেক বড় বড় গ্রুপ রয়েছে যেখানে প্রমোশনাল পোস্ট করা যায়। সেই গ্রুপগুলোতে প্রথমে আপনি জয়েন করুন।
এরপর বিভিন্ন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের এফিলিয়েট মার্কেটিং প্রোগ্রামে জয়েন হয়ে তাদের প্রোডাক্ট গুলোর প্রমোশন করুন। আপনি ফেসবুক গ্রুপগুলোতে প্রোডাক্টের রিভিউসহ আকর্ষণীয় কন্টেন্ট লিখে পোস্ট করবেন।
আর পোস্টের ডেসক্রিপশনে অথবা কমেন্ট বক্সে এফিলিয়েট লিঙ্ক যুক্ত করবেন। এতে করে এফিলিয়েট মার্কেটিং করে ফেসবুক গ্রুপ থেকে আয় করা যাবে।
২. অ্যাফিলিয়েট লিংক পোস্ট করা
Amazon, Daraz, ClickBank, Impact বা CJ Affiliate থেকে অ্যাফিলিয়েট লিংক সংগ্রহ করে তা সোশ্যাল মিডিয়া, ব্লগ অথবা ফোরামে পোস্ট করে প্রতিটি বিক্রিতে কমিশন আয় করতে পারবেন। এই মাধ্যমে প্যাসিভ ইনকাম করা যায়।
আর প্রচুর আয় করা সম্ভব না থাকে, শুধুমাত্র একটু পরিশ্রম করে প্রচুর মার্কেটিং করতে হয়। বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ ও পেজে আপনি মার্কেটিং কাজ শুরু করতে পারেন। এই উপায় থেকে আয় করতে হলে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে মার্কেটিং করতে থাকুন।
৩. ব্লগে কন্টেন্ট পোস্ট করে ইনকাম
নিজস্ব ব্লগ খুলে সেখানে নিয়মিত পোষ্ট করলে Google AdSense, স্পনসর্ড পোস্ট এবং প্রোডাক্ট রিভিউ থেকে টাকা আয় করা যায়। তবে মনে রাখুন এই উপায়ে ইনকাম করতে হলে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। এছাড়াও এই উপায়টিতে আয় করার জন্য নিজস্ব কিছু স্কিল এর প্রয়োজন রয়েছে।
বিশেষ করে কনটেন্ট রাইটিং জানতে হবে। আর এটি খুবই ধীর স্থির ইনকাম প্রক্রিয়া। অর্থাৎ আপনি আজকে ওয়েবসাইট খুলে কালকে থেকেই ইনকাম করতে পারবেন বিষয়টি এমন নয়। আপনার নিজস্ব ব্লগিং ওয়েবসাইট খুলে সেখান থেকে আয় করতে হলে কমপক্ষে দুই থেকে তিন মাস সময় লাগতে পারে।
এজন্য ধৈর্য ধরে কাজ করে যেতে হবে। প্রচুর আকর্ষণীয় কন্টেন্ট লিখুন এবং ওয়েব সাইটে পাবলিশ করুন। সহজেই মনিটাইজেশন নিয়ে google এডসেন্সের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে আয় করতে পারবেন।
এছাড়াও আপনার ওয়েবসাইটে প্রচুর ট্রাফিক থাকলে স্পন্সর পোষ্ট ও এফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে আয় করতে পারবেন। নিজের ব্লগিং ওয়েবসাইট ছাড়াও অন্যজনের ওয়েবসাইটে আপনি আর্টিকেল রাইটিং সার্ভিস দিয়েও ইনকাম করতে পারবেন।
এই কাজগুলো অনলাইনে কম্পিউটার ও মোবাইল দিয়ে করা যায়। আপনি বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে কন্টেন্ট রাইটিং করে প্রতি মাসে 10 থেকে 15 হাজার টাকা অনায়াসে আয় করতে পারবেন। এক্ষেত্রে কিছুটা কনটেন্ট রাইটিং দক্ষতা প্রয়োজন।
৪. Quora বা Reddit-এ ভ্যালুয়েবল পোস্ট করা
Quora, Reddit বা অন্য কোনো প্রশ্নোত্তর ভিত্তিক ফোরামে তথ্যবহুল উত্তর পোস্ট করে সেখানে আপনার সাইটের অথবা এফিলিয়েট লিংক যুক্ত করে প্রচুর ট্রাফিক পেতে পারেন। আর এই এই ট্রাফিককে মনেটাইজ করে ইনকাম করা যায়।
যদি আপনার ব্লগিং সাইট থেকে তাহলে, বিভিন্ন ফোরাম প্ল্যাটফর্মে আকর্ষণীয় পোস্ট লিখে সেখানে ব্লগিং সাইটের লিংক যুক্ত করে ভিজিটর বাড়াতে পারেন।
এভাবেও ব্লগিং সাইটে ভিজিটর এনে ইনকাম করা যেতে পারে। তাছাড়াও ফোরাম প্ল্যাটফর্ম গুলোতে প্রমোশনাল পোস্ট করার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আয় করতে পারবেন।
৫. পেইড পোস্টিং ও কনটেন্ট মার্কেটিং
অনেক কোম্পানি ফেসবুক বা ব্লগে তাদের প্রোডাক্ট নিয়ে পোস্ট করার জন্য টাকা দেয়। এই ধরনের স্পনসর্ড পোস্ট করে আয় করতে পারেন। তবে আপনার ফেসবুক গ্রুপে প্রচুর মেম্বার বা ফলোয়ার থাকতে হবে। এছাড়াও ব্লগিং সাইটে প্রচুর ভিজিটর থাকলে আপনি এভাবে পেইড পোস্টিং করে আয় করতে পারবেন।
৬. ইউটিউব কমিউনিটি পোস্ট
আপনার YouTube চ্যানেল থাকলে কমিউনিটি ট্যাবে পোস্ট করে ভিউ এবং ট্রাফিক বাড়াতে পারেন। কমিউনিটি পোস্টে বিভিন্ন টাইপের এফফিলিয়েট লিংক যুক্ত করতে পারেন। যার ফলে আপনি এফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে আয় করতে পারবেন।
পাশাপাশি কমিউনিটি পোস্ট সেকশনে বিভিন্ন প্রোডাক্ট রিভিউ কন্টেন্ট লিখতে পারেন এবং প্রোডাক্ট এর লিংক যুক্ত করতে পারেন। এতে করে সরাসরি কোম্পানির কাছ থেকে ইনকাম করতে পারবেন।
৭. পিন্টারেস্টে প্রোডাক্ট পোস্ট করা
Pinterest-এ Eye-catching পিন তৈরি করে অ্যাফিলিয়েট লিংক যুক্ত করে পোস্ট করলে ভালো আয় করা যায়, বিশেষ করে ফ্যাশন, হোম ডেকোর, রেসিপি ও বেবি প্রোডাক্ট সম্পর্কিত পোস্টগুলো করতে পারেন। এতে করে প্রচুর ভিজিটর পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৮. লিংক শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করা
বিভিন্ন লিংক শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মে আকর্ষণীয় পোস্ট করে সেখানে লিঙ্ক যুক্ত করে ভিজিটন নিয়ে ইনকাম করতে পারবেন। বর্তমানে অনেকেই অ্যাড্রেসটা ডাইরেক্ট লিংক মার্কেটিং করে প্রচুর টাকা ইনকাম করছে। লিংক মার্কেটিং করার জন্য লিংক শর্টনার Shrtl, Linkvertise, Ouo.io ,Adfly-ইত্যাদি প্ল্যাটফর্ম গুলো ব্যবহার করতে পারেন।
৯. অনলাইন ফোরামে কন্টেন্ট পোস্ট করা
টেক, গেমিং, ইনকাম বা ফ্যাশন-রিলেটেড ফোরামে নিজস্ব আর্টিকেল বা লিংক পোস্ট করে নিজের ওয়েবসাইটের ট্রাফিক বাড়াতে পারেন। আর আপনারা জানেন ওয়েবসাইটের ট্রাফিক বাড়ালে মনিটাইজেশনের মাধ্যমে ইনকাম করা যায়।
১০. টেলিগ্রাম চ্যানেলে পোস্ট করে টাকা ইনকাম
নিজস্ব টেলিগ্রাম চ্যানেল তৈরি করে সেখানে অ্যাফিলিয়েট লিংক, পেইড প্রমোশন বা ডিজিটাল প্রোডাক্ট পোস্ট করে ভালো পরিমাণে ইনকাম করতে পারবেন। কিন্তু এক্ষেত্রে নিজের টেলিগ্রাম চ্যানেলে অবশ্যই প্রচুর মেম্বার থাকতে হবে।
এর জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে মেম্বার সংখ্যা বাড়ান। আকর্ষণীয় পোস্ট করলে সহজেই মেম্বার বাড়তে পারে। টেলিগ্রাম চ্যানেল লিংক বিভিন্ন জায়গায় শেয়ার করুন এবং সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা বাড়াতে থাকুন। এরপর টেলিগ্রাম চ্যানেলে প্রমোশনাল পোস্ট করে টাকা আয় করুন।
পোস্ট করে ইনকাম করার কিছু টিপস
- সব সময় মানসম্মত এবং ভ্যালু যোগ করে এমন কনটেন্ট পোস্ট করুন
- EO অপটিমাইজ কন্টেন্ট পোস্ট করলে গুগল বা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ট্রাফিক বেশি আসে।
- নির্দিষ্ট একটি নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্মে নিয়মিত পোস্ট করুন
শেষ কথা
পোস্ট করে টাকা আয় করার পদ্ধতি সহজ হলেও সঠিক কৌশল, নিয়মিততা এবং ধৈর্য দরকার। আপনি যদি উপরের যেকোনো একটি বা একাধিক পদ্ধতিতে মনোযোগ দিয়ে কাজ করেন, তাহলে ঘরে বসেই ভালো পরিমাণে ইনকাম করতে পারবেন। তাহলে আপনাদের কোন উপায়টি ভালো লেগেছে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আর কোন বিষয়ে প্রশ্ন থাকলে দ্রুত কমেন্ট করুন, আমরা শীঘ্রই রিপ্লাই দেয়ার চেষ্টা করব।