আপনাদের মধ্যে অনেকেই স্টুডেন্ট রয়েছেন, যারা ঘরে বসে অনলাইনে পার্টটাইম ইনকাম করার চিন্তা ভাবনা করে থাকেন। তবে অনেকেই সঠিক গাইড লাইনের অভাবে ঘরে বসে পড়াশোনা পাশাপাশি পার্ট টাইম আয় করতে পারে না।
আর এজন্য আমরা আজকের আর্টিকেলে এমন কিছু উপায় শেয়ার করব যেগুলো অনুসরণ করে আপনি পড়াশোনার পাশাপাশি বাড়তি ইনকাম করতে পারবেন। কথা হলো বাড়তি আয় করার উপায় সমূহ সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
বাড়তি আয় করার উপায়
আজকের যুগে স্টুডেন্টরা শুধু ঘরে বসেই পড়াশোনা করে না, তারা পড়াশোনা করার পাশাপাশি বিভিন্নভাবে অনলাইনে বাড়তি ইনকাম করার চেষ্টা করে থাকে। তবে সঠিক উপায় ও মাধ্যম না জানলে কখনোই পার্টটাইম ইনকাম করা যায় না।
বর্তমানে উপার্জন করার অনেক উপায় রয়েছে, যেগুলো আপনি ছাত্র অবস্থায় অনুসরণ করে পার্ট টাইম ইনকাম করতে পারেন। বাড়তি ইনকাম বলতে মূলত পার্ট টাইম ইনকামকে বোঝানো হয়।
আরো পড়ুনঃ
যদি আপনি একজন স্টুডেন্ট হয়ে থাকেন, পড়াশোনার পাশাপাশি ইনকাম করার ইচ্ছা থাকে তাহলেই আজকের উপায় গুলো অনুসরণ করে ইনকাম করা শুরু করুন। কেননা আজকের আর্টিকেলে থাকছে বাড়তি আয় করার উপায় গুলো। চলুন এবার বিস্তারিত জেনে আসা যাক।
১. কনটেন্ট রাইটিং বা ব্লগিং
যদি লেখালেখি ভালো লাগে, তাহলে ব্লগিং হতে পারে আপনার আয়ের উৎস। কারণ অনেক স্টুডেন্ট আছেন যারা লেখালেখি করতে খুবই পছন্দ করে থাকেন।যদি আপনার লেখালেখি করা অভ্যাস হয়ে থাকে, তাহলে এই অভ্যাসটিকে কাজে লাগিয়ে ইনকামের পথ তৈরি করুন।
আর এই লেখালেখির অভ্যাস থেকে আপনি ইনকামের উৎস তৈরি করতে পারবেন। আর তা হলো কনটেন্ট রাইটিং বা ব্লগিং। আপনার অনলাইনে লেখালেখি করতে যদি ভালো লাগে তাহলে সেই লেখালেখি কে ইনকামে রূপান্তর করার জন্য ব্লগিং করা শুরু করতে পারেন।
এজন্য প্রথমেই একটি ওয়েবসাইটের প্রয়োজন হবে। তাই নিজের ইচ্ছামতো অথবা পছন্দ মত একটি ওয়েবসাইট বানিয়ে নিন। ইউটিউবে হাজার হাজার ভিডিও পাবেন যেখানে ওয়েবসাইট বানানোর নিয়ম দেখানো হয়েছে।
ব্লগিং ওয়েবসাইট বানিয়ে সেখানে নিয়মিত এসইও অপটিমাইজ আর্টিকেল লেখা শুরু করুন। যদি রেগুলার আর্টিকেল পাবলিশ করেন তাহলে খুব দ্রুত আপনার ভিউজ বাড়বে এবং আপনি বেশি বেশি ট্রাফিক পাবেন।
যার ফলে আপনি গুগল এডসেন্স আবেদন করে অনুমোদন নিয়ে বিজ্ঞাপন দেখানোর মাধ্যমে ব্লগিং ওয়েবসাইট থেকে আয় করতে পারবেন। ছাত্ররা পড়াশোনার পাশাপাশি এই উপায়ে খুব সহজেই বাড়তি ইনকাম করতে পারবে।
কারণ এই সেক্টরের কাজ করার জন্য খুব একটা বেশি সময়ের প্রয়োজন হয় না। দিনে সর্বোচ্চ দুই থেকে তিন ঘন্টা সময় ব্যয় করলেই ব্লগিং করা যায়। কারণ আমি নিজেই পড়াশোনার পাশাপাশি ব্লগিং করে ইনকাম করে থাকি। এ জন্য আমি বলছি ব্লগিং করতে হলে খুব বেশি সময় প্রয়োজন হয় না।
মাত্র ২ থেকে ৩ ঘন্টা ব্যয় করে একটি কোয়ালিটি সম্পন্ন আর্টিকেল লেখা যায়। সেই আর্টিকেল পাবলিশ করে আপনি ব্লগিং ওয়েবসাইট থেকে আয় করতে পারবেন। অবশ্যই আপনার আর্টিকেল ইউনিক এবং আকর্ষণীয় হতে হবে।
এতে করে ভিজিটর সংখ্যা বাড়বে এবং আপনি গুগল এডসেন্স সহ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বা স্পন্সর পোস্টের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। অনেকেই প্রশ্ন করেন কি কি বিষয় নিয়ে ব্লগিং ওয়েবসাইটে আর্টিকেল লেখা যায়। আপনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আর্টিকেল লিখতে পারেন।
এটাই নিতান্তই আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। মূল কথা আপনার যে বিষয়গুলো লিখতে ভালো লাগে সেই বিষয়গুলো নিয়ে আর্টিকেল লিখুন। ব্লগিং করা ছাড়াও আপনি আর্টিকেল রাইটিং সার্ভিস বা কনটেন্ট রাইটিং সার্ভিস দিয়েও আয় করতে পারেন।
বাংলাদেশে অনেকগুলো ওয়েবসাইট রয়েছে, যারা মূলত কনটেন্ট রাইটিং জব দিয়ে থাকে। আপনি তাদের সাথে যোগাযোগ করে কন্টেন্ট রাইটিং জব নিতে পারেন এবং মাস শেষে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খুব সহজেই উপার্জন করে ফেলতে পারেন।
২. গ্রাফিক্স ডিজাইন
বাড়তি টাকা উপার্জন করার আরেকটি উপায় হল গ্রাফিক্স ডিজাইন করা। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনলাইনে ডিজাইন করাকেই গ্রাফিক্স ডিজাইন বলা হয়। যেমন আপনাকে একটি টি-শার্টের ডিজাইন তৈরি করতে বলা হলো।
আপনি এখন যদি টি-শার্টের ডিজাইন করতে পারেন, সে ক্ষেত্রে আপনি একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার হবেন। গ্রাফিক্স ডিজাইনার যারা আছেন তারা এই টাইপের অনেক ধরনের ডিজাইন করে থাকেন। পড়াশোনার পাশাপাশি স্টুডেন্টরা চাইলে এই সেক্টরেও কাজ করতে পারেন।
আপনি এখানে প্রজেক্ট ভিত্তিক কাজ করতে পারবেন এবং খুব কম সময়ের সার্ভিস দিয়ে আপনার নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবেন।
এতে করে আপনার একদিকে এক্সট্রা ইনকাম হচ্ছে এবং আপনি পড়াশোনা করতে পারছেন। তাই আমার মতে গ্রাফিক্স ডিজাইন সেক্টরটি বাড়তি ইনকাম করার জন্য সেরা একটি উপায়।
এবার অনেকেই প্রশ্ন করেন গ্রাফিক্স ডিজাইন কাজ কোথায় পাওয়া যেতে পারে? গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজগুলো সাধারণত ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মসহ ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ এবং লোকাল মার্কেটপ্লেসে পাওয়া যায়।
সবচেয়ে ভালো হয় ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে একাউন্ট খুলে ক্লায়েন্টদের সার্ভিস দেওয়া। গ্রাফিক্স ডিজাইন এক্সপার্ট হলে ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্মে একাউন্ট খুলুন এবং সার্ভিস দেওয়া শুরু করুন।
তবে অনেক কোম্পানি বর্তমানে হাই প্রফেশনাল গ্রাফিক্স ডিজাইনার হায়ার করে থাকে। যদি আপনার গ্রাফিক্স ডিজাইন সেক্টরে খুবই দক্ষতা থাকে, সে ক্ষেত্রে আপনি কোম্পানিগুলোতে জবের জন্য আবেদন করতে পারেন।
৩. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং (Affiliate Marketing)
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হচ্ছে অন্যের প্রোডাক্ট বিক্রির মাধ্যমে কমিশন আয়। যেমন Amazon, Daraz, বা ClickBank-এর প্রোডাক্টের রিভিউ করে আপনি আয় করতে পারেন।
একটি niche-based website তৈরি করে রিভিউ ও তুলনামূলক পোস্ট প্রকাশ করলে ট্রাফিক ও ইনকাম দুটোই বাড়বে। পড়াশোনা করার পাশাপাশি এই কাজগুলো খুব সহজে কম্পিউটারের মাধ্যমে করা যায়। যার ফলে আপনি কম সময়ে এ কাজগুলো করে ইনকাম করতে পারবেন।
এর ফলে আপনার নিজের পড়াশোনা খরচ নিজে চালাতে পারবেন। এতে করে দেশে অনেকটা বেকারত্ব কমবে। তাই আপনারা চাইলে লেখাপড়া করার পাশাপাশি এই উপায়ে বাড়তি ইনকাম করতে পারেন।
৪. ইউটিউব চ্যানেল তৈরি
ভিডিও বানাতে পারলে YouTube হতে পারে দুর্দান্ত আয়ের উৎস। নির্দিষ্ট বিষয়ে নিয়মিত ভিডিও আপলোড করে আপনি AdSense, Sponsorship এবং Membership থেকে আয় করতে পারেন। তবে প্রথম দিকে ইউটিউব থেকে ইনকাম অনেকটা ধীরে ধীরে হবে। যদি আপনি ধৈর্য ও পরিশ্রম দিয়ে প্রচুর কাজ করেন তাহলে ইউটিউব থেকেও পার্টটাইম ইনকাম করতে পারবেন।
৫. ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্ভিস
পড়াশোনার পাশাপাশি বাড়তি আয় করার উপায় গুলোর মধ্যে আরেকটি জনপ্রিয় উপায় হল ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্ভিস। যদি আপনার একাধিক ল্যাঙ্গুয়েজ এ দক্ষতা থাকে সে ক্ষেত্রে আপনি এই সার্ভিসটি অনলাইনে দিতে পারেন।
এখানে আপনাকে সারাক্ষণ সার্ভিস দিতে হবে না, যখন কোন কাস্টমার আপনাকে প্রশ্ন করবে অথবা সার্ভিসের জন্য যোগাযোগ করবে তখন আপনি তাদের সাথে যোগাযোগ করে উত্তর দিবেন।
বর্তমানে অনেক বিদেশি ব্যবসা এখন Virtual Assistant (VA) নিয়োগ করে। আপনি তাদের ডেটা এন্ট্রি, ইমেইল ম্যানেজমেন্ট বা কাস্টমার সাপোর্ট সার্ভিস দিয়ে ঘরে বসেই আয় করতে পারেন।
উপসংহার
বাড়তি আয় করার জন্য ধৈর্য, পরিকল্পনা ও নিয়মিত পরিশ্রম অপরিহার্য। আপনি যেকোনো একটি বা একাধিক পদ্ধতি বেছে নিয়ে নিজের দক্ষতা অনুযায়ী আয় বাড়াতে পারেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বাড়তি আয় করার উপায় গুলো জানা এবং সেই অনুযায়ী পরিশ্রম ও ধৈর্য দিয়ে কাজ করে যাওয়া। এর ফলে আপনি অনলাইনে পার্টটাইম ইনকাম বা বাড়তি ইনকাম করতে পারবেন।

আমি উদ্ভাস আইটির এডমিন, একজন অনলাইন ইনকাম ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক কনটেন্ট ক্রিয়েটর। অনলাইন আয়ের বাস্তব ও কার্যকরী উপায়, প্রযুক্তির আপডেট এবং ডিজিটাল দুনিয়ার নানা দিক নিয়ে আমি নিয়মিত আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি। লক্ষ্য একটাই—পাঠকদের জন্য নির্ভরযোগ্য তথ্য তুলে ধরা।