মোবাইল দিয়ে সুন্দর ছবি তৈরি করতে চান, তাহলে মোবাইল দিয়ে ছবি এডিট করার অ্যাপসগুলো ব্যবহার করতে পারেন। আজকের আর্টিকেলে আমরা মোবাইল দিয়ে ফটো এডিট করার সেরা এপস গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো।
যারা মোবাইল দিয়ে ছবি তুলে আকর্ষণীয় ভাবে এডিট করতে চাচ্ছেন, তারা অবশ্যই আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে ধৈর্য সহকারে পড়বেন। সেরা ৫টি অ্যাপ সম্পর্কে জানাবো,
আপনার ইচ্ছা মত একটি অ্যাপ মোবাইল ফোনে ডাউনলোড করে ছবি এডিট করে আকর্ষণীয় করতে পারবেন। চলুন এবার বিস্তারিত জানা যাক।
মোবাইল দিয়ে ছবি এডিট করার অ্যাপস
অনেকেই মনে করেন সুন্দর ছবি এডিট করতে হলে কম্পিউটার বা প্রফেশনাল সফটওয়্যার দরকার। কিন্তু এখন মোবাইল অ্যাপ দিয়েই আপনি খুব সহজে প্রফেশনাল মানের ছবি এডিট করতে পারবেন।
অবশ্যই পড়ুনঃ
প্রতিটি অ্যাপের রয়েছে আলাদা আলাদা ফিচার, সুবিধা ও এডিটিং স্টাইল। তাই নিচে প্রতিটি অ্যাপের বিস্তারিত রিভিউ দেওয়া হলো, যাতে আপনি আপনার কাজের ধরন অনুযায়ী সঠিক অ্যাপটি বেছে নিতে পারেন।
১. PicsArt – All-in-One Photo Editor
PicsArt হলো মোবাইল ফটো এডিটিংয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাপগুলোর একটি। অ্যাপটিতে আপনি ছবি এডিট করার হাজার হাজার ফিল্টার পাবেন, যেগুলো সম্পন্ন ফ্রিতে ব্যবহার করে ছবি এডিট করতে পারবেন।
এছাড়াও ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড রিমুভ করা এবং ব্লার করা খুব সহজেই এই অ্যাপ ব্যবহার করে করা যাবে। এর পাশাপাশি অ্যাপটিতে অনেক ধরনের স্টিকার, টেমপ্লেট ও ফন্ট পেয়ে যাবেন, যেগুলো ব্যবহার করে ছবি আকর্ষণীয় ও সুন্দর করা যাবে।
এছাড়া বর্তমানে এই অ্যাপটিতে ভিডিও এডিটিং ফিচার যুক্ত হয়েছে, এতে করে আপনি ফেসবুক ও ইউটিউবের শর্ট ভিডিও গুলো এখানে এডিট করতে পারবেন।
যারা এডিটিং সেক্টরের নতুন, তারা চাইলে এই অ্যাপটি দিয়ে ছবি এডিটিং এর কাজগুলো শুরু করতে পারেন। কারণ এই অ্যাপটির ইন্টারফেস অনেকটা সহজ।
আর সোশ্যাল মিডিয়া ছবি এডিট করার জন্য এটি একটি পারফেক্ট অ্যাপ। আপনারা চাইলে অ্যাপটি ডাউনলোড করে ব্যবহার করে দেখতে পারেন। তাদের অ্যাপ ছাড়াও অফিশিয়াল সাইট আছে, যেখানে সরাসরি ছবি আপলোড করে এডিট করা যায়।
২. Snapseed
Google-এর তৈরি Snapseed একটি সম্পূর্ণ ফ্রি ফটো এডিটিং অ্যাপস, যেখানে আপনি প্রফেশনাল ভাবে ফ্রিতে বিভিন্ন টুলস ব্যবহার করে ছবি এডিটিং করতে পারবেন।
এই অ্যাপটিতে প্রায় 29+ advanced tools (Tune Image, Curves, Lens Blur) রয়েছে। যা আপনি সম্পূর্ণ ফ্রিতে ইউজ করতে পারবেন।
এছাড়াও অ্যাপটিতে RAW ফাইল এডিটিং করার ফিচার আছে, যা অনেকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মূলত যারা মোবাইল দিয়ে ছবি এডিট করতে চান এবং ফ্রি একটি এডিটিং অ্যাপ চাচ্ছেন।

তারা চাইলে এই অ্যাপটি ডাউনলোড করতে পারেন। এই অ্যাপটির কাজ করার ফাংশন গুলো অনেক সহজ। যে কোন ব্যক্তি প্রথমবার ইউজ করলেই সহজেই বুঝে ফেলতে পারবে।
আর এডিট করা খুবই সহজ, তাই যারা একদম নতুন এডিটিং করতে চাচ্ছেন, তারা এই অ্যাপটি ডাউনলোড করুন এবং এডিট করা শুরু করুন। এই অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোরে আছে।
অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোর থেকে ১০০ মিলিয়ন এর বেশি বা ডাউনলোড হয়েছে। আর অ্যাপটির রেটিং ৪.২। তাহলে বুঝতে পারছেন অ্যাপটি অনেকটা বেশি জনপ্রিয়। আর মোবাইল দিয়ে এডিটিং করার জন্য এটি একটি সেরা অ্যাপ।
৩. Lightroom Mobile – Pro Level Editing
Adobe Lightroom মোবাইলে ছবি এডিট করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত জনপ্রিয়। আর এই অ্যাপ দিয়ে প্রো লেভেলের ছবি এডিটিং করা যায়।
মূল কথা আপনারা যারা মোবাইল দিয়ে প্রফেশনাল ফটো এডিটিং করতে চাচ্ছেন, তাদের জন্য এটি একটি উপযুক্ত অ্যাপ।
এই অ্যাপটির কম্পিউটার ভাষণ রয়েছে, তবে বর্তমানে গুগল প্লে স্টোরে তাদের মোবাইল ভার্সনের অ্যাপটি পেয়ে যাবেন।
এই অ্যাপটি ডাউনলোড করে বিভিন্ন ধরনের এডিটিং ফিচারগুলো ব্যবহার করতে পারবেন। তবে অনেকগুলো ফিচার পেইড, সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সাবস্ক্রিপশন প্যাক কিনে ব্যবহার করতে হয়।
অ্যাপটির কিছু ফিচারঃ
- Color Grading Panel: ছবির হাইলাইট, শ্যাডো ও মিডটোনের আলাদা কালার কন্ট্রোল।
- Professional Exposure Editing: ব্রাইটনেস, কনট্রাস্ট, শার্পনেস, ভিনিয়েটিং সবকিছু নিখুঁতভাবে ঠিক করা যায়।
- Presets Library: ফ্রি ও পেইড অনেক ফিল্টার পাওয়া যায়, যাতে এক ক্লিকেই ছবিকে সিনেমাটিক লুক দেওয়া যায়।
- Noise Reduction: কম আলোতে তোলা ছবির গ্রেইন কমিয়ে ক্লিয়ার করা যায়।
- Cloud Sync: Adobe অ্যাকাউন্ট থাকলে সব ছবি ক্লাউডে সেভ হয়ে যায়।
যদি আপনি কনটেন্ট ক্রিয়েটর, ফটোগ্রাফার বা ইউটিউবার হন, তাহলে Lightroom আপনার জন্য সেরা একটি অ্যাপ।
৪. Canva – Photo Editing
Canva মূলত একটি ডিজাইন টুল, কিন্তু এর photo editing tools খুব শক্তিশালী। এটি তাদের জন্য পারফেক্ট যারা ছবির সাথে পোস্টার, ব্যানার, থাম্বনেইল ডিজাইন করেন।
মূল কথা যারা প্রফেশনাল ভাবে ফটো এডিটিং এবং গ্রাফিক্স ডিজাইন করতে চান, তাদের জন্য এটি একটি বেস্ট অ্যাপ। এই অ্যাপটিতে ছোট ছোট গ্রাফিক্স ডিজাইন এর কাজগুলো করা যায়।
এখন আর আপনাকে কম্পিউটারে ফটোশপ ইন্সটল করে গ্রাফিক্স ডিজাইন করতে হবে না। আপনি মোবাইল দিয়ে এই অ্যাপটি ডাউনলোড করে গ্রাফিক্স ডিজাইন এর ছোট ছোট কাজগুলো করতে পারবেন।
পাশাপাশি ফটো এডিটিং টুলস আছে, যেগুলো ব্যবহার করে ফটো এডিটিং করা যায়। মোবাইল দিয়ে ছবি এডিট করার ক্ষেত্রে এই অ্যাপটি অনেক ফিচার দিয়ে থাকে।
বিশেষ করে আপনি এই অ্যাপটিতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ফিচার পাবেন। যেখানে আপনি A.I ব্যবহার করে সরাসরি এডিটিং করতে পারবেন।
অ্যাপটির বিশেষ কিছু সুবিধাঃ
- AI Background Removal: ১ ক্লিকে ব্যাকগ্রাউন্ড মুছতে পারেন।
- Thousands of Templates: ইউটিউব থাম্বনেইল, রিল কভার, ফ্লায়ার, পোস্ট, বিজনেস কার্ড সব কিছু তৈরি করা যায়।
- Brand Kit: একই রঙ, ফন্ট ও স্টাইলে ব্র্যান্ড তৈরি করা যায়।
- Text Effects: শ্যাডো, লিফট, কার্ভ টেক্সটসহ অনেক স্টাইল।
- Photo Enhancer: ছবির কালার, ব্রাইটনেস, ডিটেইল সহজে ঠিক করা যায়।
৫. VSCO
VSCO হলো ফিল্টার-ভিত্তিক অ্যাপ যা ছবিকে আর্টিস্টিক ও ন্যাচারাল লুক দিতে ব্যবহার করা হয়। এই অ্যাপটিতে প্রচুর ফিল্টার আছে, এর ফলে আপনি ছবির ফিল্টার চেঞ্জ করে আকর্ষণীয় এডিটিং করতে পারবেন।
অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোরে আছে, ইতিমধ্যে অ্যাপটি ১০০ মিলিয়ন এর কাছাকাছি ডাউনলোড হয়েছে। আর অ্যাপটির রেটিং রয়েছে ৪.২। আর অ্যাপটির প্রধান বিচার হলো এখানে আপনি ছবির কালার টোন পরিবর্তন করতে পারবেন।
পাশাপাশি ছবির সিনেমাটিক লুক দিতে পারবেন। এছাড়াও একটিতে ভিডিও এডিটিং টুলস গুলো পাবেন, তবে এই টুলস গুলো পেইড। আপনি প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন কেনার পরেই এই টুলস গুলো ব্যবহার করতে পারবেন।
কিন্তু আপনি চাইলে ফ্রিতে বিভিন্ন ধরনের টুল ব্যবহার করে মোবাইল দিয়ে ছবি এডিট করতে পারেন। অনেকেই এটি ছবি এডিট করার সফটওয়্যার হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। আপনি ডাউনলোড করে ট্রাই করে দেখতে পারেন।
প্রধান ফিচারঃ
- Film Style Filters: ছবিতে সিনেমাটিক ফিল্ম লুক আসে।
- Tone & Color Tools: Temperature, Tint, Highlight Tint, Shadow Tint।
- VSCO Grid: নিজের ছবির একটি আর্টিস্টিক গ্যালারি তৈরি করা যায়।
- Advanced HSL Tool: রঙের গভীর টোন নিয়ন্ত্রণ।
- Video Editing (Premium): ভিডিওতেও VSCO ফিল্টার ব্যবহার করা যায়।
যারা ইনস্টাগ্রাম বা পোর্ট্রেট ফটোগ্রাফি করেন, তাদের জন্য VSCO ফিল্টার এক কথায় পারফেক্ট।
শেষ কথা
মোবাইল দিয়ে ছবি এডিট করা এখন আর কঠিন কাজ নয়। উপরের অ্যাপগুলো শুধু সহজ নয়, বরং প্রফেশনাল মানের রেজাল্ট দিতে সক্ষম।
আপনি নতুন হন বা প্রফেশনাল এই অ্যাপগুলো ব্যবহার করলে আপনার ছবি আরও আকর্ষণীয়, মানসম্মত ও চোখে লাগার মতো হবে। আপনাদের অ্যাপসগুলো সম্পর্কে কোন মন্তব্য থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।

আমি উদ্ভাস আইটির এডমিন, একজন অনলাইন ইনকাম ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক কনটেন্ট ক্রিয়েটর। অনলাইন আয়ের বাস্তব ও কার্যকরী উপায়, প্রযুক্তির আপডেট এবং ডিজিটাল দুনিয়ার নানা দিক নিয়ে আমি নিয়মিত আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি। লক্ষ্য একটাই—পাঠকদের জন্য নির্ভরযোগ্য তথ্য তুলে ধরা।






