কোথায় টাকা ইনভেস্ট করা যায়? জানুন ৭টি নিরাপদ ও লাভজনক উপায়

আপনাদের মধ্যে অনেকেরই টাকা ইনভেস্ট করে ইনকাম করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। অনেকেই আপনারা প্রশ্ন করে থাকেন কোথায় টাকা ইনভেস্ট করা যায়? আপনাদের এই প্রশ্নের কথা চিন্তা করেই আমরা আর্টিকেলটিতে টাকা ইনভেস্ট করার নিরাপদ ও লাভজনক উপায় গুলো সম্পর্কে আলোচনা করব।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

আমরা সেরা কিছু ইনভেস্টমেন্ট মাধ্যম ও প্রজেক্ট সম্পর্কে তুলে ধরব, যেখানে আপনারা ইনভেসমেন্ট করলে লাভজনকভাবে প্রচুর ইনকাম করতে পারবেন।

বর্তমানে টাকা ইনভেস্ট করার অনেক প্ল্যাটফর্ম ও মাধ্যম রয়েছে, যেখানে সাধারণত ইনভেস্ট করলে ঝুঁকি থাকে। চলুন এবার কোথায় টাকা ইনভাস্ট করা যায় তার নিরাপদ ও লাভজনক উপায় গুলো জেনে আসা যাক। 

কোথায় টাকা ইনভেস্ট করা যায়? ৭টি লাভজনক উপায় 

বর্তমান ডিজিটাল যুগে শুধু টাকা সঞ্চয় করলেই হবে না, সেই টাকাকে সঠিক জায়গায় ইনভেস্ট করাটাও জরুরি। সঠিক জায়গায় ইনভেস্ট করলে আপনি ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক ভিত্তি তৈরি করতে পারবেন। কিন্তু অনেকেই প্রশ্ন করেন – কোথায় টাকা ইনভেস্ট করা যায়? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে আজকের আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

১. সঞ্চয়পত্র (Savings Certificate)

বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম নিরাপদ ইনভেস্টমেন্ট মাধ্যম হচ্ছে সঞ্চয়পত্র। এটি মূলত লং-টার্ম ইনভেস্টমেন্ট হিসেবে পরিচিত। এখানে আপনি প্রতি বছর নির্দিষ্ট হারে মুনাফা পাবেন এবং মূল টাকা পুরোপুরি সুরক্ষিত থাকবে।

অবশ্যই পড়বেনঃ

এই উপায়ে বেশিরভাগ মানুষেরাই ইনভেস্টমেন্ট করে প্রচুর টাকা ইনকাম করছে। কারণ এই উপায়টি 100% সুরক্ষিত, আর আপনি এখান থেকে প্রতি মাসে মুনাফা অর্জন করতে পারছেন। আপনার টাকা জমা রাখার ওপর ভিত্তি করে মুনাফা বাড়তে থাকবে।

অনেকেই এই মাধ্যমে প্রচুর টাকার সঞ্চয়পত্র কিনে মাসে প্রায় এক লক্ষ টাকার বেশি মুনাফা পাচ্ছে। এখানে আপনার কোন কাজ করা ছাড়াই ঘরে বসে ইনভেস্ট করে আয় হচ্ছে। তাই সর্বশেষে বলবো নিরাপদ ও লাভজনক উপায় হিসেবে সঞ্চয়পত্র মাধ্যমটি নির্বাচন করতে পারেন। 

আরো পড়ুনঃ  প্রতিদিন ইনকাম প্রতিদিন পেমেন্ট নিন সহজ উপায়ে

সুবিধাঃ

  • ঝুঁকিমুক্ত
  • দীর্ঘমেয়াদী লাভ পাবেন
  • নারীদের জন্য অতিরিক্ত সুবিধা রয়েছে

২. স্টক মার্কেট (শেয়ার বাজার)

তারা একটু ঝুঁকি নিতে পারেন এবং প্রচুর লাভজনক আয় করতে চান, তাদের জন্য স্টক মার্কেট একটি ভালো অপশন। এখানে আপনি বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার কিনে লাভ করতে পারবেন। যদি কোম্পানির শেয়ার এর দাম বৃদ্ধি পায় তাহলে আপনি লাভ করতে পারবেন।

আর যদি কোম্পানি শেয়ার এর দাম কমতে শুরু করে, তাহলে আপনি লসে পড়তে পারেন। এক্ষেত্রে কিছুটা ঝুঁকি রয়েছে। যারা এই স্টক মার্কেট ও শেয়ার বাজার সম্পর্কে জানেন, তারা এখানে ইনভেস্টমেন্ট করবেন।

কোথায় টাকা ইনভেস্ট করা যায়, তার মধ্যে এই উপায়টিতে সবচেয়ে বেশি ইনকাম করা গেলেও, কিছুটা ঝুঁকি থাকে। যারা রিস্ক ম্যানেজমেন্ট করে কাজ করতে চাচ্ছেন তারা এখানে ইনভেস্ট করুন। তাহলে প্রচুর পরিমাণ আর্নিং করতে পারবেন।

এই সেক্টর থেকে এক্সপার্ট ব্যক্তিরা প্রায় প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ এবং কোটি কোটি টাকা ইনকাম করে থাকে। যদি আপনি এক্সপার্ট হয়ে থাকেন তাহলে চেষ্টা করে দেখতে পারেন। তবে আমি বলব আগে আপনি এই সেক্টর সম্পর্কে ভালোভাবে জানুন এবং শিখুন। এরপরে ইনভেস্ট করে ইনকাম করার চেষ্টা করুন। 

সতর্কতাঃ

  • ভালোভাবে শিখে ইনভেস্ট করুন
  • দীর্ঘমেয়াদী চিন্তাভাবনা করুন
  • গুজব এড়িয়ে চলুন

৩. মিউচুয়াল ফান্ড

যদি আপনি সরাসরি স্টক মার্কেট বুঝতে না পারেন, তাহলে মিউচুয়াল ফান্ড হতে পারে আপনার জন্য পারফেক্ট। এখানে এক্সপার্ট ফান্ড ম্যানেজাররা আপনার হয়ে ইনভেস্ট করেন। আর তারা লাভ করলে আপনি নির্দিষ্ট অংশ লাভ পান।

এখানে সাধারণত ফান্ড ম্যানেজার আপনার হয়ে ইনভেসমেন্ট কার্যকলাপ পরিচালনা করে থাকে। একজন এক্সপার্ট ফান্ড ম্যানেজার আপনার ইনভেস্টমেন্টের সকল কার্যকলাপ করে থাকবে। এক্ষেত্রে ঝুঁকি কিছুটা কম থাকে। মিউচুয়াল ফান্ড সিস্টেমটি অনেকটা স্টক মার্কেটের মত।

তবে এই সিস্টেমে আপনাকে নিজে নিজে শেয়ার কেনাবেচা করতে হবে না। একজন এক্সপার্ট ফান্ড ম্যানেজার আপনার পক্ষ থেকে সকল কার্যক্রম করবে। এভাবে আপনি কম ঝুঁকিতে টাকা ইনভেস্ট করলে লাভবান হতে পারবেন। তবে অবশ্যই সঠিক প্ল্যাটফর্ম গুলো বাছাই করে ইনভেস্ট করবেন। 

সুবিধাঃ

  • রিস্ক অনেকটা কম থাকে
  • এক্সপার্ট ম্যানেজমেন্ট দ্বারা পরিচালিত
  • কম অঙ্কের টাকাও ইনভেস্ট করা যায়

৪. এফডিআর (Fixed Deposit Receipt)

যারা খুবই নিরাপদভাবে ইনভেস্ট করতে চান, তাদের জন্য এফডিআর বা মেয়াদী আমানত হলো একটি উত্তম উপায়। এখানে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য টাকা জমা রেখে আপনি ভালো পরিমাণ মুনাফা পেতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ  বিকাশে গেম খেলে টাকা ইনকাম করা সেরা ৩টি উপায়

আর যাদের প্রচুর টাকা রয়েছে, তারা এই মাধ্যমে ইনভেস্টমেন্ট করুন। আপনি এই উপায়ে টাকা জমা রেখে দীর্ঘমেয়াদি মুনাফা নিতে পারবেন। এটি একটি সবচেয়ে নিরাপদ ইনভেস্টমেন্ট উপায়। 

সুবিধাঃ

  • স্থিতিশীল রিটার্ন
  • বিভিন্ন মেয়াদে সুবিধা
  • সহজে শুরু করা যায়

৫. রিয়েল এস্টেট (জমি/ফ্ল্যাটে ইনভেস্ট)

দীর্ঘমেয়াদে বড় মুনাফার জন্য রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট বেশ কার্যকরী। জমি বা ফ্ল্যাটে ইনভেস্ট করলে ভবিষ্যতে এর দাম বাড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাই বেশি বেশি করে জমি ও ফ্লাটে ইনভেসমেন্ট করুন। বিভিন্ন জায়গায় জমি কিনে রাখুন।

পরবর্তীতে দাম বৃদ্ধি পেলে বিক্রি করে লাভ করুন। এই উপায়টি বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়, কারণ এটি 100% নিরাপদ এবং খুবই লাভজনক উপায়। কারণ এখানে আপনি ইচ্ছামত ফ্ল্যাট ও জমি কিনে পরবর্তীতে বেশি দামে বিক্রি করতে পারবেন।

কারণ বর্তমানে সময়ের সাথে সাথে জমি ও ফ্লাটের দাম বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। তাই আপনি এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে রিয়েল এস্টেট বিজনেসটি শুরু করতে পারেন। এক্ষেত্রে সঠিক জমি ও ফ্লাট বাছাই করা জরুরী। এই বিষয়ে জ্ঞান ও ধারণা নিয়েই ইনভেস্টমেন্ট করবেন। 

সতর্কতাঃ

  • জমির লোকেশন যাচাই করুন
  • বৈধ কাগজপত্র নিশ্চিত করুন

৬. অনলাইন ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যাটফর্ম

আপনাদের মধ্যে যারা ঝুঁকি নিতে পছন্দ করেন এবং বেশি মুনাফা অর্জন করতে চাচ্ছেন। তাদের জন্য রয়েছে অনলাইন প্লাটফর্মে ইনভেস্ট করার সুযোগ। বর্তমানে অনেক অনলাইন প্লাটফর্ম রয়েছে যেগুলোতে সঠিকভাবে টাকা ইনভেস্ট করলে এক মাসেই লক্ষ লক্ষ টাকা অর্জন করা যায়।

কোথায় টাকা ইনভেস্ট করা যায় তার উপায় গুলোর মধ্যে এই উপায়টি বর্তমানে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তবে যারা এক্সপার্ট রয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকিটা কম থাকে। বর্তমানে অনেক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যেমনঃ Binance, eToro, IQ Option-এ আপনি ইনভেস্ট করতে পারেন।

বিশেষ করে ক্রিপ্টোকারেন্সি, ফরেক্স, CFD তে বিনিয়োগ করতে পারেন।আমি নিজেই এই সেক্টরে ইনভেস্টমেন্ট করে ৮০ হাজার টাকার বেশি আয় করেছি। তবে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। আমি সাধারণত ক্রিপ্টোকারেন্সি মাধ্যমে Binance অ্যাপটিতে ইনভেস্টমেন্ট করে ইনকাম করেছিলাম।

আমার ইনভেস্টমেন্ট খুবই কম ছিল যার কারণে আমি প্রায় তিন মাসে ৮০ হাজার টাকা আয় করেছি। তবে যাদের ইনভেস্টমেন্ট প্রচুর রয়েছে তারা অনেক টাকা আয় করতে পারবেন। কিন্তু এখানে ইনভেস্টমেন্ট করে ইনকাম করার জন্য ট্রেডিং করতে হয়, যা সাধারণত সকলেই করতে পারে না।

আরো পড়ুনঃ  কোন app দিয়ে টাকা ইনকাম করা যায়?

আমি নিজেই প্রথম দিকে ইনকাম করতে পারতাম না, অনেক লসে পড়েছি। প্রথমদিকে আমি প্রায় ১০ হাজার টাকার বেশি লস করেছিলাম। পরে আমি ধীরে ধীরে বিভিন্ন মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ধারণা অর্জন করে এবং শেখার চেষ্টা করি।

এরপর আমি বিভিন্নভাবে শিখে দক্ষতা অর্জন করতে থাকি, তারপর আপনি দেখতে পেলেন আমি নিজে নিজেই অনলাইন ট্রেডিং করে ৮০ হাজার টাকার বেশি ইনকাম করেছি। যারা এই উপায়ে ইনকাম করতে চাচ্ছেন প্রথমে আগে উপায়টি সম্পর্কে জানুন এবং শিখুন। এরপর ইনভেস্টমেন্ট করে ইনকাম করার চেষ্টা করুন। 

সতর্কতাঃ

  • ঝুঁকি বেশি
  • ভালোভাবে শিখে শুরু করুন
  • ট্রাস্টেড প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করুন

৭. নিজের স্কিল ডেভেলপমেন্টে ইনভেস্ট

সবচেয়ে নিরাপদ এবং লাভজনক ইনভেস্টমেন্ট হলো নিজের স্কিল উন্নয়নে ইনভেস্ট করা। আপনি কোনো কোর্স করতে পারেন, ফ্রিল্যান্সিং শিখতে পারেন বা ডিজিটাল মার্কেটিং, গ্রাফিক ডিজাইন ইত্যাদি শিখতে পারেন। ভবিষ্যতে এই স্কিল থেকেই আপনি আয় শুরু করতে পারবেন।

তাই আমার মতে নিজের স্কিল ডেভেলপমেন্টে ইনভেস্টমেন্ট করা সবচেয়ে বেশি লাভজনক। কারণ আপনি নিজের স্কিল ব্যবহার করেই সারা জীবন আয় করতে পারবেন। একমাত্র আপনার স্কিল থাকলে আপনি অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে হাজার হাজার ডলার উপার্জন করতে পারবেন।

তাই আমি এই উপায়টিকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি। আপনি ফ্রিল্যান্সিং সহ বিভিন্ন বিষয়ে কোর্স করতে পারেন। আর আপনারা জানেন কোর্স করতে হলে নির্দিষ্ট ফি দিতে হয়, এক্ষেত্রে আপনার নিজের স্কিল ডেভেলপমেন্টে কিছু টাকা ইনভেস্টমেন্ট করতে হচ্ছে। 

শেষ কথা – কোথায় টাকা ইনভেস্ট করা যায়

টাকা ইনভেস্ট করার আগে নিজের লক্ষ্য, আর্থিক অবস্থা এবং ঝুঁকি নেওয়ার সক্ষমতা বিবেচনা করা জরুরি। আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করলাম “কোথায় টাকা ইনভেস্ট করা যায়” – এই প্রশ্নের সেরা ৭টি উত্তর।

আপনি চাইলে একাধিক মাধ্যমেও ইনভেস্ট করতে পারেন, যাতে রিস্ক ম্যানেজমেন্ট হয়। আর ইনভেস্টমেন্ট শুরু করার আগে ভালোভাবে রিসার্চ করুন এবং প্রয়োজনে একজন ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাডভাইজরের পরামর্শ নিন।

Leave a Comment