বর্তমানে আমরা সকলেই কমবেশি মোবাইল ফোনে শট ভিডিও দেখতে পছন্দ করে থাকি। আর এই শর্ট ভিডিও দেখে অনেকে আমরা বিনোদন ও মজা নিয়ে থাকে। তবে এই শর্ট ভিডিও দেখার পাশাপাশি শর্ট ভিডিও আপলোড করেও ইনকাম করার সুযোগ রয়েছে।
বিশেষ করে আপনি ফেসবুকে শর্ট ভিডিও আপলোড করে প্রচুর আয় করতে পারবেন। ফেসবুকে শর্ট ভিডিওগুলোকে রিলস বলা হয়। আর ফেসবুক রিলস থেকে ইনকাম করার অনেক উপায় রয়েছে, যেগুলো আমরা আপনাদের মাঝে এখন শেয়ার করব।
এই উপায় গুলো অনুসরণ করলে খুব সহজেই ফেসবুকে শর্ট ভিডিও দেখার পাশাপাশি শর্ট ভিডিও আপলোড করেই ইনকাম করতে পারবেন। যার ফলে আপনার পার্ট টাইম ইনকাম হবে। এবার চলুন বিস্তারিত জানা যাক।
ফেসবুক রিলস থেকে ইনকাম করার উপায়
আজকের ডিজিটাল যুগে ফেসবুক থেকে ইনকাম করার সবচেয়ে জনপ্রিয় উপায় হল Facebook Reels। বিশেষ করে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রিলসের চাহিদা দিনে দিনে বাড়ছে।
আরো পড়ুনঃ টাকা ইনকাম করার গেম খেলে ইনকাম করুন
আরো পড়ুনঃ গ্রামের ব্যবসার আইডিয়া
তবে রিলস থেকে আয় করার জন্য শুধু ভিউস যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন সঠিক কৌশল ও প্ল্যাটফর্মের অফিশিয়াল মনিটাইজেশন টুল ব্যবহার করা। এখানে ধাপে ধাপে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো ফেসবুক রিলস থেকে ইনকাম করার ৫টি কার্যকর উপায়।
১. রিলস মনিটাইজেশন প্রোগ্রাম
বর্তমান সময়ে ফেসবুক কোম্পানি নির্দিষ্ট ক্রিয়েটরদের জন্য রিলস প্লে বোনাস ও মনিটাইজেশন সুবিধা চালু করেছে। মূলত যারা ফেসবুকের রিলস মনিটাইজেশন শর্ত পূরণ করবে তারাই এই মনিটাইজেশন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতে পারবে।
আর সহজেই মনিটাইজেশন পেয়ে রিলস ভিডিও আপলোড করে ইনকাম করতে পারবেন। ফেসবুকে রিলস মনিটাইজেশন পাওয়ার একমাত্র শর্ত হলোঃ রিলস অবশ্যই অরিজিনাল, ক্রিয়েটিভ এবং কমিউনিটি গাইডলাইন অনুসারে হতে হবে।
আপনার শর্ট রিলস ভিডিওটি যদি ইউনিক এবং অরজিনাল হয়ে থাকে তাহলে আপনি খুব সহজেই নির্দিষ্ট সংখ্যক ভিউজ এর মাধ্যমে ফেসবুক মনিটাইজেশন পেয়ে যাবেন। আর রিলস মনিটাইজেশন পেলে খুব সহজেই ডলার আয় করা যায়।
আপনি যত বেশি ভিউজ রিলস ভিডিওতে আনতে পারবেন তত বেশি আপনার ইনকাম হতে থাকবে। তবে একটা কথা মনে রাখবেন ভিডিও অবশ্যই ফেসবুকের গাইডলাইন অনুসারে হতে হবে। ফেসবুকের সকল শর্ত মেনে চললে আপনি মনিটাইজেশন অপশনটি খুব দ্রুত চালু করতে পারবেন।
আর একবার মনিটাইজেশন চালু হলেই শর্ট ভিডিও আপলোড করে ফেসবুক থেকে আনলিমিটেড ইনকাম করা যাবে। বর্তমানে এই উপায়টি বাংলাদেশ খুবই জনপ্রিয় অনলাইন ইনকাম করার জন্য। আর এই কারণেই আমরা এই উপায়টি আপনাদের মাঝে শেয়ার করলাম।
আপনার হাতের কাছে জাস্ট একটা মোবাইল ফোন থাকলেই, সেই মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করে আপনি যে কোন কিছুর প্রাকৃতিক দৃশ্য অথবা এক্সক্লুসিভ কন্টেন্ট রিলস ভিডিও বানিয়ে আপলোড করে আয় করতে পারবেন।
ধরুন আপনি মাছ চাষ করেন, সে ক্ষেত্রে আপনি মাছ চাষের ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতে পারেন। এটি হবে আপনার ইউনিক ভিডিও এবং অরজিনাল ভিডিও। যার ফলে আপনি খুব সহজেই মনিটাইজেশন পেয়ে অনলাইন থেকে আয় করতে পারবেন। নিম্নে ফেসবুক রিলস মনিটাইজেশন পাওয়ার মূল শর্তসমূহ বলা হলোঃ
- আপনার অ্যাকাউন্ট অবশ্যই Meta-এর Monetization Eligibility Standards অনুযায়ী হতে হবে।
- পেজ/প্রোফাইল নীতিমালা ভঙ্গ করা যাবে না।
- আপনার বয়স অন্তত ১৮ বছর বা তার বেশি হতে হবে।
- নিজের প্রোফাইল বা ফেসবুক পেজে সর্বনিম্ন ৫,০০০ ফলোয়ার থাকতে হবে।
- গত ৬০ দিনে অন্তত ৬০,০০০ মিনিট ওয়াচ টাইম অথবা ৫ মিলিয়ন রিলস ভিউস থাকতে হবে।
উপরোক্ত শর্তগুলো পূরণ করলেই আপনি খুব সহজে ফেসবুক রিলস মনিটাইজেশন পেয়ে যাবেন। তাই সঠিকভাবে ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতে থাকুন। ভিডিও অবশ্যই অর্গানিক এবং অরজিনাল হতে হবে।
২. ব্র্যান্ড ডিল ও স্পন্সরশিপ
যাদের ফলোয়ার ও এনগেজমেন্ট বেশি, তারা সহজেই ব্র্যান্ড থেকে স্পন্সরশিপ অফার পেয়ে থাকেন। আর ফলোয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য শর্ট ভিডিও বেশি বেশি আপলোড করতে পারেন। এর ফলে আপনি প্রচুর স্পনসর শীপ অফার পাবেন যেখান থেকে অনেক বেশি ইনকাম হবে।
ফেসবুকে রিলস ভিডিও খুব দ্রুত ভাইরাল হয়ে থাকে, এই কারণে আপনি রিলস ভিডিও আপলোড করে ফেসবুক পেজে বা প্রোফাইলের ফলোয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারেন। আর ফলোয়ার বৃদ্ধি পেলেই শর্ট ভিডিও আকারে ব্যান্ড প্রমোশন করে এবং স্পন্সারশীপ করে দিয়ে আয় করতে পারবেন।
৩.অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
ফেসবুকে সহজেই রিলস ভিডিওতে কোনো প্রোডাক্ট রিভিউ করে অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক শেয়ার করা যায়।দর্শক সেই লিঙ্ক দিয়ে প্রোডাক্ট কিনলে আপনি কমিশন পাবেন। এটি ফেসবুক রিলস থেকে আয়ের অন্যতম জনপ্রিয় উপায়।
তাই আপনি চাইলে ফেসবুকে শর্ট ভিডিও আপলোড করে এফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারেন। প্রথমত শর্ট ভিডিও আপলোড করে ফেসবুকের প্রোফাইলের ফলোয়ার সংখ্যা বাড়াতে থাকুন।
যখন আপনার এক থেকে দুই মিলিয়ন ফলোয়ার হয়ে যাবে, তখন আপনি খুব সহজেই এফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করতে পারবেন এবং রেগুলার আপনার ইনকাম শুরু হবে। ফলোয়ার বেশি থাকলে আপনি প্রচুর প্রোডাক্ট মার্কেটিং করতে পারবেন।
আর দর্শক আপনার শেয়ার করা লিংক থেকে প্রোডাক্ট ক্রয় করলেই আপনি প্রতিটি প্রোডাক্ট বিক্রির বিনিময়ে কমিশন পাবেন। এভাবে শর্ট ভিডিওতে এফিলিয়েট মার্কেটিং করে ইনকাম করা যায়।
এই উপায়টি বর্তমানে অনেক জনপ্রিয়, তাই আপনারা চাইলে শর্ট ভিডিও আপলোড করে এফিলিয়েট মার্কেটিং এর কার্যকলাপ শুরু করতে পারেন।
আর এই মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে ইনকাম করা যাবে, তাই আপনারা সকলে নির্দ্বিধায়ই ফেসবুকে শর্ট ভিডিও আপলোড করে এই পদ্ধতিতে আয় করা শুরু করতে পারেন।
৪. নিজস্ব ব্যবসার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বিক্রি করুন
অনেকেই নিজের ডিজিটাল প্রোডাক্ট, ই-বুক, কোর্স বা সার্ভিস বিক্রি করে রিলসের মাধ্যমে ইনকাম করেন। রিলস হলো দ্রুত গ্রাহকের কাছে পৌঁছানোর সেরা মাধ্যম। তাই সকলকে বলবো রিলস ভিডিওকে কাজে লাগিয়ে নিজস্ব ব্যবসার প্রচার ও মার্কেটিং করুন।
তাহলে খুব দ্রুত প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বিক্রি করে আয় করতে পারবেন। কারণ যেহেতু শর্ট ভিডিও খুব দ্রুত ভাইরাল হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আপনি নিজের প্রোডাক্টের শট ভিডিও আকর্ষণীয় ভাবে বানিয়ে আপলোড করতে পারেন।
এর ফলে আপনি নিজের প্রোডাক্ট বিক্রি করতে পারবেন দর্শকদের কাছে এবং পাশাপাশি শর্ট ভিডিও মনিটাইজেশন থেকেও ইনকাম করা যাবে। আপনার যদি নিজস্ব কোন ব্যবসা থাকে তাহলে এই পদ্ধতিটি কাজে লাগান।
প্রতিদিন আপনার ব্যবসার প্রোডাক্ট এর রিভিউ শর্ট ভিডিও তৈরি করুন এবং আপলোড করুন। দেখবেন প্রচুর প্রোডাক্ট ক্রয়ের অর্ডার পাচ্ছেন। এভাবে কিন্তু সহজেই ফেসবুকের শর্ট ভিডিওর সাহায্য নিয়ে আয় করা যায়।
৫. ফ্যান সাপোর্ট ও সাবস্ক্রিপশন
শর্ট ভিডিও বানানোর মাধ্যমে আপনি ফ্যান সাপোর্ট ও subscription থেকে আয় করতে পারেন। যদি আপনার ভিডিও গুলো আকর্ষণীয় এবং এক্সক্লুসিভ হয়ে থাকে তাহলে খুব সহজেই সাবস্ক্রিপশন প্যাক বিক্রি করতে পারবেন। তাছাড়াও দর্শকদের কাছ থেকে ফেসবুক স্টার গিফট নিতে পারেন।
ফেসবুক স্টার থেকেও আয় করা যায়। আর Facebook Stars হলো একটি ভার্চুয়াল গিফট সিস্টেম, যেখানে আপনার ফ্যানরা লাইভ বা রিলস কনটেন্টে স্টারস কিনে আপনাকে পাঠাতে পারে।
১টি স্টার = $0.01 (প্রায় ১ সেন্ট)। অর্থাৎ ১০০ স্টার মানে $১ আয়। ফেসবুক স্টার গিফট পাওয়ার জন্য লাইভে বা রিলসে দর্শকদের উৎসাহিত করুন । Q&A, মিউজিক পারফরম্যান্স বা গেমিং রিলস এ ধরনের কনটেন্টে সাধারণত বেশি স্টারস পাওয়া যায়।
শেষ কথা
Facebook Reels এখন শুধু এন্টারটেইনমেন্ট নয়, বরং আয়ের একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম। আপনি যদি নিয়মিত ভ্যালু-বেসড কনটেন্ট তৈরি করেন এবং সঠিকভাবে মনিটাইজেশন টুল ব্যবহার করেন, তবে সহজেই রিলস থেকে মাসে ভালো পরিমাণ ইনকাম সম্ভব।
শুরুতে ছোট ছোট কনটেন্ট দিয়ে শুরু করুন, পরে ফ্যানবেস বাড়ার সাথে সাথে Stars, Subscriptions, Sponsorships, Affiliate Marketing এবং Product Sales এর মাধ্যমে আয় বাড়াতে থাকুন। আশা করছি ফেসবুক রিলস থেকে ইনকাম করার উপায় গুলো জেনে আপনি উপকৃত হয়েছেন।
আমরা এই ধরনের প্রায় অনলাইন ইনকাম বিষয় নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আইডিয়া উদ্ভাস আইটি সাইটে প্রকাশ করে থাকি। আরও বিভিন্ন ধরনের ইনকাম আইডিয়া জানতে আমাদের সাইটের অনলাইন ইনকাম ক্যাটাগরিতে ভিজিট করতে পারেন।

আমি উদ্ভাস আইটির এডমিন, একজন অনলাইন ইনকাম ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক কনটেন্ট ক্রিয়েটর। অনলাইন আয়ের বাস্তব ও কার্যকরী উপায়, প্রযুক্তির আপডেট এবং ডিজিটাল দুনিয়ার নানা দিক নিয়ে আমি নিয়মিত আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি। লক্ষ্য একটাই—পাঠকদের জন্য নির্ভরযোগ্য তথ্য তুলে ধরা।